উহুদ যুদ্ধ

 উহুদ যুদ্ধ

মহানবী (সা.) এর জীবদ্দশায় কুরাইশ কাফিরদের সাথে মুসলিমদের সংগঠিত দ্বিতীয় যুদ্ধের নাম উহুদের যুদ্ধ। মদিনা থেকে তিন মাইল দূরে উহুদ পাহাড়। হিজরী তৃতীয় সালের শাওয়াল মাসে এ পাহাড়ের পাদদেশে উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধের কারণসমূহ নিমড়বরূপ:


উহুদ যুদ্ধ



উহুদ যুদ্ধের কারণসমূহ

বদর যুদ্ধে অধিকাংশ কুরাইশ নেতার মৃত্যু সংবাদে সারা আরব জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘরে ঘরে কানড়বার রোল পড়ে যায়। মক্কার অন্যতম নেতা আবু লাহাব এ দুঃসংবাদ শ্রবণে শয্যা গ্রহণ করে আর ওঠেনি। আবু সুফিয়ান প্রতিশোধের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে। সে বলতে লাগল, আমি যতদিন না এ পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পারি, ততদিন পর্যন্ত সুগন্ধ দ্রব্য ব্যবহার করব না, স্ত্রী স্পর্শ করব না। মোটকথা, কাফিররা স্ফুলিঙ্গের ন্যায় জ্বলে ওঠে। বদর যুদ্ধে বিজয়ের পর মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে বনু হাশিম স¤প্রদায়ের μমোনড়বতি উমাইয়াদের অসহ্য হয়ে ওঠে। তাই কুরাইশদের দুটি শাখা হাশিমী ও উমাইয়ার মধ্যে শত্রæতা শুরু হয়, যা কম-বেশি উহুদ যুদ্ধে ইন্ধন যোগাতে সাহায্য করে।

ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি বলেন, বদরের বিপর্যয়ের পর ইহুদি কবি কাব বিন আশরাফ মক্কায় গমন করে কাব্য রচনা করে কুরাইশদের উত্তেজিত করতে থাকে। শুধু কুরাইশদেরই নয়, বেদুইনদেরও সে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে তৎপর হয়। ফলে উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আর ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, “বদরে বিপর্যয়ের পর আবু সুফিয়ান ৪০০ সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে মদিনার সীমান্তে অগিড়বসংযোগ, লুণ্ঠন ও ধংসলীলায় মত্ত হলে মুসলিমরা তা প্রতিহত করতে অগ্রসর হয়, আর এতেই উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।”

উহুদ যুদ্ধের ঘটনাবলী

৩০০০ সৈন্য সমেত আবু সুফিয়ান মদিনা অভিমুখে অগ্রসর হয়। তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসের ১৪ তারিখে মুহাম্মদ (সা.) জুমুআর সালাত আদায় করে সমবেত মুসলিমদের পরামর্শ সভায় বললেন, “এবার আমাদের নগর ছেড়ে দূরে গিয়ে যুদ্ধ করা সমীচীন হবে না। তাতে বিপদ ঘটতে পারে। তোমাদের মত কী?” বায়োজ্যেষ্ঠ মুহাজির ও আনসারগণ সকলে মহানবী (সা.)-এর মতে সাড়া দেন, কিন্তু এ প্রস্তাব তরুণ দলের মনঃপূত হয়নি। তারা এ ব্যবস্থাকে কাপুরুষতা মনে করে মদিনার বাইরে গিয়ে শত্রæর সম্মুখীন হওয়া সমীচীন ভাবে। শেষে অনেকেই তাদের মত সমর্থন করে। হযরত মুহাম্মদ সকলকে রণসাজে সজ্জিত হতে নির্দেশ দেন। মোট এক হাজার সৈন্যের এ বাহিনীতে ২ জন মাত্র

অশ্বারোহী, ৭০ জন বর্মধারী, ৪০ জন তীরন্দাজ, বাকি সকলেই বর্মহীন পদাতিক ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ৩০০ সৈন্য সমেত পথিমধ্য থেকে দলত্যাগ করে। উহুদ পাহাড়ের অপর পার্শে ¦গিয়ে রাসূল (সা.) একটি সুবিধাজনক স্থানে শিবির স্থাপন করেন- সম্মুখে যুদ্ধের ময়দান পেছনে পাহাড়। আবু সুফিয়ান তার বিরাট বাহিনী নিয়ে পূর্বেই উহুদ প্রান্তরে অপেক্ষা করছিল। মুসলিম পক্ষের বামপার্শে¦ পর্বতগাত্রে একটি গিরিপথ ছিল। অনন্য সমরকুশলী মহানবী (সা.) এ গিরিপথের পশ্চাৎ দিক থেকে শত্রæর আμমণের আশঙ্কায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা)-এর নেতৃত্বে ৫০ জনের একটি তীরন্দাজ বাহিনী মোতায়ন করেন এবং পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের সেখানে অবস্থান করার হুকুম দেন। উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ আরম্ভ হয়। মুসলিমদের হাতে শত্রæ পক্ষের বহু সৈন্য হতাহত হলো। অল্পক্ষণের মধ্যেই ময়দানে টিকতে না পেরে কুরাইশরা পালাতে আরম্ভ করে। কুরাইশ সৈন্যদের পালাতে দেখে মুসলিমগণ পরিত্যক্ত সম্পদ মানে গনীমত সংগহ্র করতে লেগে যায়। এ মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ ভুলে গিরিপথে নিয়োজিত তীরন্দাজ বাহিনীও গনীমত সংগ্রহে নেমে পড়ে। ৫০ জনের মধ্যে মাত্র দু’জন শেষ পর্যন্ত গিরিপথ পাহারায় নিযুক্ত থাকেন। দূর থেকে সুচতুর খালিদ এ দৃশ্য দেখে তার অশ্বারোহী সেনাদল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে দু’জন তীরন্দাজকে অনায়াসে পরাজিত ও নিহত করে পশ্চাৎ দিক থেকে মুসলিমদের ওপর আμমণ করে। পলায়নপর কুরাইশ সৈন্যরাও ফিরে আসে। যুদ্ধ পুনরায় আরম্ভ হয়। বীরবর হামযা ও মুসয়াব শহীদ হন। মুসলিম সৈন্যগণ বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। বহু সাহাবা হতাহত হন। এবার কুরাইশরা মহানবী (সা.)-কে লক্ষ্য করে তীর ও অন্যান্য অস্ত্র প্রয়োগ করতে থাকে। উহুদের যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সম্মুখের চারটি দাঁত মুবারক শহীদ হয় এবং ৭০ জন মুসলিম শাহাদাতবরণ করেন। কুরাইশদের পক্ষে ২৩ জন নিহত হয়। কয়েকজন সাহাবী নিজেদের জীবন তুচ্ছ জ্ঞান করে মহানবী (সা.)-কে রক্ষা করার জন্য ব্যূহ রচনা করেন। বহু তীর তাঁদের শরীর বিদ্ধ করে। যুদ্ধের মাঠে এ খবর রটে গেল, মুহাম্মদ (সা.) নিহত হয়েছেন। এতে বহু মুসলিম হতোদ্যম হয়ে পড়েন। হযরত তালহা কাঁধে করে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে তুলে নেন এবং তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এবার বিক্ষিপ্ত সাহাবাগণ আবার মহানবী (সা.)-এর চতুর্দিকে সমবেত হন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবাগণ যাঁরা মাঠে ছিলেন সকলে পর্বতে আরোহণ করেন। কাফিররা উঠতে চেয়ে ব্যর্থ হয়।

উহুদ যুদ্ধের ফলাফল

উহুদ যুদ্ধ মুসলিমদের জন্য ছিল ধৈর্যের অগিড়ব পরীক্ষা। একথা সত্য, নিরবচ্ছিনড়ব বিজয় কোনো জাতির ভাগ্যেই জুটে না। বিজয়ের আনন্দ ও পরাজয়ের গøানি সঙ্গী করেই বৃহত্তর সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে হয়। এজন্য প্রয়োজন ধৈর্যের। এ পরীক্ষায় মুসলিমগণ ধৈর্য ও সাহসিকতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

ঈমানের দৃঢ়তা ঃ যুদ্ধোত্তরকালে আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানে মুসলিমদের খাঁটি মুমিন হতে এবং হকের ওপর দৃঢ়পদ থাকতে নির্দেশ প্রদান করেন। এ যুদ্ধের ফলে মুসলিমদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেদিন যুদ্ধের প্র ম দিক জয় লাভ করেও পরবর্তীতে তাদের পরাজয় মেনে নিতে হয়েছিল। তাই পরবর্তী যত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সেগুলোতে তারা মহানবী (সা.)-এর আদেশ নির্দেশ পুরোপুরি মেনেই যুদ্ধ করেছিলেন। ফলে বলা যেতে পারে, উহুদ যুদ্ধ মুসলিমদের জন্য ঈমানী পরীক্ষা হিসেবে কাজ করেছিল।

ইহুদিদের মদিনা সনদের শর্ত ভঙ্গের শাস্তি ঃ ঐতিহাসিক পি.কে.হিট্টি বলেন, ইহুদি বনু নযির ও বনু কায়নুকা গোত্র মদিনা সনদের শর্ত ভঙ্গ করে কুরাইশদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অপরাধে মদিনা থেকে বহিষ্কৃত হয়।

জয় পরাজয়ের অভিজ্ঞতা ঃ উহুদ রাণাঙ্গনে প্রাথমিকভাবে মুসলিমদের বিজয় এবং সে কারণে উল্লাস ও বিশৃঙ্খলাই পরবর্তীতে পরাজয়ে পর্যবসিত হয়। অপরদিকে কুরাইশরা আপাত জয়লাভ করলেও এর কোনো সুফল ভোগ করতে পারেনি; বরং নৈতিক দুর্বলতাহেতু মনোবল হারিয়ে ময়দান ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

মুসলিমদের বীরত্ব বৃদ্ধি ঃ উহুদের পরাজয় মুসলিমদের বীরত্ব অধিকতর বৃদ্ধি করেছিল। মদিনায় প্রত্যাগমনের পর মহানবী (সা.) একদল সাহাবীকে মক্কাবাসী কুরাইশদের পশ্চাদ্ধাবনের নির্দেশ দেন। এতে তারা অতুলনীয় সাহস, মনোবল ও বীর্যবত্তার প্রমাণ দিয়েছিলেন।

পরবর্তী বিজয়ের পথ উন্মোচন ঃ উহুদ যুদ্ধ মুসলিমদের জন্য ছিল এক বিরাট শিক্ষা। উহুদ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী নেতার আদেশ মানা এবং শৃঙ্খলা রক্ষার শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন, তাই পরবর্তীতে কোনো যুদ্ধেই তারা আর এ ভুল করেননি। অতএব উহুদের পরাজয় মুসলিমদের ভবিষ্যৎ সাফল্যের পথ উন্মুক্ত করেছিল।

কাফিরদেই পরাজয় ঘটে ঃ মুসলিমগণ যদি উহুদে পরাজিতই হতো, তাহলে কুরাইশরা মদিনা আμমণ করতো। কেননা মদিনা আμমণের উদ্দেশ্যেই তারা এসেছিল। সুতরাং উহুদে তাদের পরাজয়ই হয়েছিল। কাফিররা সত্যিই যে মুসলিমদের ওপর জয়ী হতে পারেনি, আবু সুফিয়ান তা ভালোভাবে বুঝেছিল। নতুবা যুদ্ধশেষে সে “আগামী বছর তোমাদের সাথে বুঝাপড়া হবে” কেন বলল?

উহুদ যুদ্ধের শিক্ষা

প্র মত, মুসলিম তরুণরা রাসূল (সা.) ও অন্যান্য সাহাবাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে না পেরে মদিনা শহরের বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়েছিলেন। যুদ্ধ জয় অপেক্ষা গনীমত সংগ্রহ প্রবণতাই অনেকের মধ্যে ছিল প্রবল। মহানবী (সা.)-এর কড়া হুকুম সত্তে¡ও তীরন্দাজদের স্থান ত্যাগই এর প্রমাণ। নেতার আদেশ ও অভিমতের প্রতি এহেন অশ্রদ্ধা যে ভয়ঙ্কর দোষের, উহুদ যুদ্ধে মুসলিমগণ তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিল। এ যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার ফলে পরবর্তীকালে কখনো এ ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। কাজেই বলতে হবে, অমঙ্গলের মধ্য দিয়ে মুসলিমদের মঙ্গল সাধিত হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, শত্রæর শাণিত তরবারি মহানবী (সা.)-এর মস্তকে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল; এমন দুর্যোগের মধ্যেও তিনি নেতার আদর্শ স্থাপন করেছিলেন, সংকট মুহূর্তেও তিনি বিচলিত হননি, কর্তব্য পালনে ভুল করেননি। বিক্ষিপ্ত মুসলিম সৈন্যদের তিনি একত্র করেছিলেন এবং তাঁর নৈতিক মনোবল রক্ষা করতে পেরেছিলেন। এরূপ অবস্থায় পড়লে কিরূপ ধৈর্য ও ত্যাগ তিতিক্ষার প্রয়োজন, উহুদ যুদ্ধ বিপর্যয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর অনুসারীদের তা দেখিয়ে দিয়েছেন।

তৃতীয়ত, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যদি মৃত্যু ঘটে তবে মুসলিমগণ কোন আলোকে এটা গ্রহণ করবে- নির্দেশিত পথে চলবে নাকি উদভ্রান্তের নতো পথ চলবে, মুসলিমদের এ পরীক্ষাও এখানে দিতে হয়েছিল। সর্বোপরি, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হলে দোয়াকালাম, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ কবজ আর ওয়ায নসিহতই যথেষ্ট নয়। এ কাজে সমরনীতি, সমর কৌশল ও বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে সমরবিশেষে জীবনের বাজিও রাখতে হয়।

উহুদের যুদ্ধে কে চূড়ান্ত বিজয় কার?

বাহ্য দৃষ্টিতে যদিও পরাজয় মনে হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মুসলিমগণ এ যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন। ইসলাম অগ্রগতি, আত্মপ্রতিষ্ঠার পথে চলেছে বদর যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে। আত্মপ্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতির এ পথে ভাগ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে; কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। রাসূল (সা.)-এর জীবনকে খÐিত দৃষ্টিতে না দেখে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। এ দৃষ্টিকোণে দেখলে প্রকৃতপক্ষে উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় হয়েছিল; পরাজয় নয়। শত্রæজয় অপেক্ষা আত্মজয় করতে পারে কিনা, বিপদের দিনে ধৈর্যধারণ করতে পারে কিনা, জয়ের সঙ্গে পরাজয়কে তারা সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারে কিনা, সত্যের জন্য মরণ বরণ করতে প্রস্তুত আছে কিনা, এটার ছিল এ যুদ্ধের অন্তর্নিহিত পরীক্ষা। তাঁরা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এ কারণেই তাঁরা বিজয়ী।

যদি মুসলামানগণ উহুদের যুদ্ধে পরাজিতই হতো; তাহলে কাফিররা মদিনা আμমণ করতো। কেননা তারা মদিনা আμমণের উদ্দেশ্যেই এসেছিল। সুতরাং উহুদে কুরাইশদের পরাজয় হয়েছিল। মুসলিমদের ওপর কাফিররা যে জয়ী হতে পারেনি ভালোভাবে তা আবু সুফিয়ান বুঝেছিল। নতুবা যুদ্ধশেষে “আগামী বছর তোমাদের সাথে বুঝাপড়া হবে” বলল কেন? মহানবী (সা.)-কে হত্যা করার জন্য যে সকল কুরাইশ নেতা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, উহুদ ও বদরে তাদের বেশিরভাগ নিহত হয়েছিল। পরবর্তীকালে বাদবাকি সকলে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। মুসলিমদের এতেও বিজয় হয়েছে।

Post a Comment

Previous Next

نموذج الاتصال