News Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

গ্রিক সভ্যতা

গ্রিক সভ্যতা


গ্রিক সভ্যতা

‘গ্রিক’ ও ‘গ্রিস’ শব্দ দুটি যথাক্রমে জাতি ও দেশ। গ্রিক সভ্যতার সাথে দুইটি সংস্কৃতির নাম জড়িয়ে আছে। একটি ‘হেলেনিক’ এবং অন্যটি ‘হেলেনিস্টিক’। গ্রিক সভ্যতায় অনেকগুলো ছোট ছোট নগর রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল। গ্রিসকে গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলা হয়। গ্রিসের ভৌগলিক পরিবেশ ছিল একটু ভিন্ন ধরনের। এ অঞ্চলে অনেকগুলো পাহাড় দাঁড়িয়ে ছিল দেয়ালের মত। ফলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ হয়ে যায় দেশটি। এ ছোট দেশগুলোর নাম হয় নগর রাষ্ট্র। এদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ছিল স্পার্টা ও এথেন্স। স্পার্টা ছিল একটি সামরিক নগর রাষ্ট্র। রাষ্ট্রনেতারা ছিল স্বৈরাচারী। পক্ষান্তরে প্রতিবেশী এথেন্স ছিল গণতান্ত্রিক নগর রাষ্ট্র। রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণের অধিকার থাকলে সে ব্যবস্থাকে বলে গণতন্ত্র। প্রাচীন পৃথিবীতে এথেন্সেই সর্বপ্রথম গণতন্ত্রের সূচনা করে। রাষ্ট্র পরিচালনায় তখন দুইটি সংসদ ছিল। গোত্র প্রধানদের নিয়ে গড়া সংসদকে বলা হত ‘এরিওপেগাস’ এবং সাধারণ নাগরিকদের সমিতিকে বলা হত ‘একলেসিয়া’। এথেন্সে চূড়ান্তভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন পেরিক্লিস। পেরিক্লিস এথেন্সের ক্ষমতায় আসেন ৪৬০ খ্রিস্টাব্দে। এশিয়া মাইনরে প্রথম লোহা আবিষ্কৃত হয়।

পেলোপনেসীয় যুদ্ধ

স্পার্টা ও এথেন্স উভয় দেশ একে অন্যের শত্রু ছিল। এথেন্স তাঁর বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে একটি জোট গঠন করে। এর নাম হয় ‘ডেলিয়ান লীগ’।

অন্যদিকে স্পার্টা তাঁর বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে আরেকটি জোট গঠন করে। এ জোটের নাম ‘পেলোপনেসীয় লীগ’। এক সময় এই দুই জোটের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। ইতিহাসে এ যুদ্ধ ‘পেলোপনেসীয় যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। ৪৬০ থেকে ৪০৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মোট ৩ বার যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে চূড়ান্ত পতন হয় এথেন্সের।

ভৌগলিক অবস্থান

 প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল ভূমধ্যসাগরকে কেন্দ্র করে। ভৌগলিকও সাংস্কৃতিক কারণে গ্রিক সভ্যতার সাথে দুইটি সংস্কৃতির নাম জড়িয়ে আছে। একটি ‘হেলেনিক’ এবং অন্যটি ‘হেলেনিস্টিক’। গ্রিসকে হেলেনীয় সভ্যতার দেশ বলা হয়। গ্রিসের প্রধান শহর এথেন্সে শুরু থেকেই যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল তাকে বলা হয় হেলেনিক সংস্কৃতি। গ্রিস উপদ্বীপ ছিল এ সংস্কৃতির মূল কেন্দ্র। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৭ অব্দ পর্যন্ত হেলেনিক সভ্যতাটি টিকে ছিল। এ সময় মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াকে কেন্দ্র করে গ্রিক সংস্কৃতি ও অগ্রিক সংস্কৃতির মিশ্রণে এক নতুন সংস্কৃতির জন্ম হয়। ইতিহাসে এ সংস্কৃতির পরিচয় হয় হেলেনিস্টিক সংস্কৃতি নামে।

ধর্ম

গ্রিকরা বহুদেবতায় বিশ্বাসী ছিল। গ্রিকদের প্রধান দেবতা জিউস। দেবতা এপেলো ও দেবী এথেনাও ছিলেন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিকবাসী বিশ্বাস করত দেবতাদের বাস উত্তর গ্রিসে অলিম্পাস পর্বতের চূড়ায়।

 

গ্রিক দেবী বা দেবতার নাম

পরিচিতি

আফ্রোডায়িট

ভালবাসা, রোমাঞ্চ এবং সৌন্দর্যের দেবী

এপেলো

সূর্য, আলো, চিকিৎসাবিদ্যা এবং সঙ্গীতের দেবতা

এরিস

যুদ্ধদেবতা

আরটেমিস

শিকার, বন, উর্বরতা এবং চাঁদের দেবী

এথেনা

প্রঞ্জার দেবী (জিউসের কন্যা)

ডিমিটার

কৃষি বিষয়ক দেবী

হারমেস

ব্যবসা বিষয়ক দেবতা (রোমান নাম মারকারি)

হেরা

বিবাহ বন্ধন অটুট রাখার দেবী (জিউসের স্ত্রী)

জিউস

দেবতাদের রাজা

 

দর্শন

গ্রিকদের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল দর্শন চর্চায়। প্রথম দিকের বিখ্যাত দার্শনিক ছিলেন থ্যালেস। থ্যালেস কল্পকাহিনীর বদলে প্রথম সূর্যগ্রহণের প্রাকৃতিক কারণ ব্যাখ্যা করেন। ধীরে ধীরে গ্রিসে এক ধরনের ‍যুক্তিবাদী দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে। এদের বলা হতো সফিস্ট।

 

সক্রেটিস

সক্রেটিস ছিলেন গ্রীসের দার্শনিকদের  মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান। অন্যান্য শাসনের প্রতিবাদ করায় গ্রিসের শাসকগোষ্ঠী ৩৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এ মহান দার্শনিককে হেমলক লতার তৈরি বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়। তাঁকে ‘সব জ্ঞানীদের গুরু’ বলা হয়।

 

প্লেটো

সক্রেটিসের ছাত্র দার্শনিক প্লেটো গ্রিক দর্শনকে চরম উন্নতির দিকে নিয়ে যান। তিনি গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেন এবং গ্রিসের নাগরিক ছিলেন। তিনি তাঁর চিন্তাগুলো ধরে রাখেন ‘দি রিপাবলিক’ নামক গ্রন্থ রচনা করে। প্লেটো ৩৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দর্শনের স্কুল ‘Akademia’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সক্রেটিসের শিক্ষার বক্তব্যগুলোকে নিয়ে ‘ডায়ালগস অব সক্রেটিস’ আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেন।

 

এরিস্টটল

প্লেটোর ছাত্র এরিস্টটলও একজন বড় দার্শনিক ছিলেন। তাঁর একটি বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ‘দ্য পলিটিক্স’। তিনি ‘লাইসিয়াম’ – এর প্রতিষ্ঠাতা। এরিস্টটল আলেকজান্ডারের শিক্ষক ছিলেন।

 

গ্রিক সাহিত্য

গ্রিক মহাকবি হোমার হাজার হাজার বছরের পুরোনো কাহিনী নিয়ে রচনা করেন মহাকাব্য ILIAD (ইলিয়াড) এবং Odyssey (ওডিসি)। গ্রিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাট্যকার ছিলেন ‘এস্কাইলাস’। তাঁর বিখ্যাত দুইটি নাটকের নাম ‘প্রমেথিউস বাউন্ড’ ও ‘আগামেমনন’। নাট্যকার সফোক্লিস একশটিরও বেশি নাটক লেখেন। এর মধ্যে দুইটি জনপ্রিয় নাটক হচ্ছে ‘এন্টিগনে ও ‘ইলেক্ট্রা’। নাট্যকার সফোক্লিসের বিখ্যাত ট্রাজেডি ‘রাজা ঈদিপাস’। ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রেও সমান কৃতিত্ব ছিল গ্রিকদের। গ্রিক ইতিহাসবেত্তা হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক বলা হয়। তিনি আনুমাণিক ৪৮৪ খ্রিস্টপূর্বে বর্তমান তুরস্কের বোদরামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Histories’। অন্য খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ ছিলেণ ‘থুকুডাইডিস’। তাকে বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাসের জনক বলা হয়।

বিজ্ঞান

গ্রিক বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেছিলেন। তারাই প্রমাণ করেছিলেন যে পৃথিবী একটি গ্রহ এবং তা নিজ কক্ষপথে আবর্তিত হয়। বিখ্যাত গ্রিক গনিতবিদ ‘পিথাগোরাস’ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে জন্ম নিয়েছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে জন্ম নেন বিজ্ঞানী এনাক্সাগোরাস। চিকিৎসাবিজ্ঞানী হিপোক্রেটিস যথেস্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

খেলাধুলা

খ্রিস্টপূর্ব ৭৭৬ অব্দে গ্রিসে অলিম্পিক প্রতিযোগিতার জন্ম হয়। প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রের খেলোয়াড়রা অংশ নিত। এ খেলার সূত্র ধরে পারস্পরিক শত্রুতার বদলে গ্রিকদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐক্য গড়ে উঠে।

 

স্থাপত্য ও ভাস্কর্য

কয়েকজন খ্যাতিমান গ্রিক ভাস্কর হচ্ছেন মাইনর, ফিদিয়াস এবং প্রাকসিটেলেস। প্রাচীন গ্রিসে মৃৎপাত্রের গায়ে চিত্রকর্ম অঙ্কন হতো।


Tags

Newsletter Signup

Sed ut perspiciatis unde omnis iste natus error sit voluptatem accusantium doloremque.

Post a Comment