News Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

পুথি সাহিত্য

পুথি সাহিত্য


পুথি সাহিত্য

পুথি সাহিত্য

পুথি (বা পুঁথি) শব্দের উৎপত্তি ‘পুস্তিকা’ শব্দ থেকে। এ অর্থে পুথি শব্দদ্বারা যেকোনো গ্রন্থকে বোঝালেও পুথি সাহিত্যের ক্ষেত্রে তা বিশেষ অর্থ বহন করে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি বিশেষ সময়ে রচিত বিশেষ ধরণের সাহিত্যই পুথি সাহিত্য নামে পরিচিত।


পুথি সাহিত্য আরবি, উর্দু, ফারসি ও হিন্দি ভাষার মিশ্রণে রচিত এক বিশেষ শ্রেণীর বাংলা সাহিত্য। আঠারো থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত এর ব্যাপ্তিকাল। এ সাহিত্যের রচয়িতা এবং পাঠক উভয়ই ছিল মুসলমান সম্প্রদায়।


দোভাষী পুঁথি'


অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আরবি-ফারসি শব্দ মিশ্রিত কাব্যকে 'দোভাষী পুঁথি' বলে।

বটতলার পুথি


দোভাষী বাংলায় রচিত পুঁথি সাহিত্য কে বলা হয়- বটতলার পুথি। কলকাতার বটতলা নামক স্থান থেকে সস্তা পেজে ছাপা হতা।

পুঁথি সাহিত্যের প্রথম সার্থক ও জনপ্রিয় কবি- ফকির গরীবুল্লাহ ।'

ফকির গরীবুল্লাহ (আনু. ১৬৮০-১৭৭০)


ফকির গরীবুল্লাহ এদেশের অষ্টাদশ শতাব্দীর একজন সাহিত্যিক। ফকির গরীবুল্লাহ হুগলি জেলার (তখনকার বর্ধমান এর অংশ) বালিয়া পরগনার হাফিজপুর গ্রামের অধিবাসী। ঐতিহাসিকরা বলেন,আঠারো শতকের মধ্যভাগে ফকির গরীবুল্লাহ কয়েকটি পুঁথি রচনা করেন। সেগুলো হচ্ছে:


  • আমির হামজা
  • -আরবদেশের ইতিহাস-পুরাণ মিশ্রিত কাহিনী অবলম্বনে রচিত আমীর হামজা জঙ্গনামা বা যুদ্ধ বিষয়ক কাব্য। মধ্যযুগে প্রায় পাঁচশ বছর ধরে বাংলা ভাষার যে ঐতিহ্য তৈরি হয়েছিল, তার সঙ্গে এ কাব্যের ভাষার মিল নেই। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি, ফারসি প্রভৃতি শব্দের মিশ্রণজাত একটি ভিন্ন ভাষায় কাব্যটি রচিত।কবি ফকির গরীবুল্লাহ (আনু. ১৬৮০-১৭৭০) আমীর হামজা রচনা করে এ কাব্যধারার সূত্রপাত করেন।
  • ইউসুফ জোলেখা
  • ইউসুফ-জুলেখা বাংলা রোমান্টিক কাব্য। পনেরো শতকে শাহ মুহম্মদ সগীর এটি রচনা করেন।শাহ মুহম্মদ সগীর ছাড়াও মধ্যযুগে শাহ্ গরীবউল্লাহ,আবদুল হাকিম, গোলাম সফাতউল্লাহ, সাদেক আলী ও ফকির মোহাম্মদ ইউসুফ-জুলেখা কাব্য রচনা করেন।
  • সোনাভান ও সতয়পীরের পুঁথি

সৈয়দ হামজা- পুঁথি সাহিত্যের প্রাচীনতম লেখক'

পুঁথি সাহিত্যের ভাষার বৈশিষ্ট্য- ইসলামী চেতনা সম্পৃক্ত কবিওয়ালা ও শায়ের চর্যাপদ এবং শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মতো এ-সব সাহিত্যশাখাও ধর্মচিন্তাকে কেন্দ্র করে বিকাশ লাভ করে। বৈষ্ণব ধর্মমতকে অবলম্বন করে রচিত হয় বৈষ্ণব পদাবলী। চৈতন্যদেবের (১৪৮৬-১৫৩৩) মানবতাবাদী ধর্মচিন্তা বৈষ্ণব সাহিত্যসৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ প্রেরণা সঞ্চার করে। সাহিত্যগুণে বৈষ্ণব পদাবলী বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট সম্পদ। রাধা-কৃষ্ণের মর্ত্যলীলাকে অবলম্বন করে রচিত হয়েছে বৈষ্ণব পদাবলী। বৈষ্ণব পদাবলীর প্রধান কবিরা হচ্ছেন-
  • বিদ্যাপতি
  • চন্ডী দাস
  • জ্ঞানদাস
  • গোবিন্দদাস
  • বলরামদাস
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শাখা হচ্ছে মঙ্গলকাব্য। মঙ্গলকাব্য রচনার পশ্চাতেও ধর্মীয় প্রেরণা কাজ করেছে। খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দ পর্যন্ত সময়ে রচিত হয় মঙ্গলকাব্য। বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজার প্রচার সম্পর্কিত এক প্রকার আখ্যানকাব্যকে মঙ্গলকাব্য বলে। মধ্যযুগের মানুষ জাগতিক নানা প্রয়োজনে ও বিপদে-আপদে এ-সব দেব-দেবীর শরণাপন্ন হয়েছে। এভাবে হিংস্র শ্বাপদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য চÐীদেবীর পরিকল্পনা, সাপের হাত থেকে বাঁচার জন্য মনসাদেবীর অধিষ্ঠান, বসন্তরোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য শীতলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরূপে আরও বহু দেব-দেবীর পরিকল্পনা করা হয়েছে। নানা দেব-দেবীর পরিকল্পনার কারণে মঙ্গলকাব্যেও রয়েছে নানা শাখা। মনসামঙ্গল, চÐীমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, শীতলামঙ্গল, শিবমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল প্রভৃতি হচ্ছে মঙ্গলকাব্যের প্রধান প্রধান শাখা। মনসামঙ্গলের প্রধান কবিরা হচ্ছেন বিজয় গুপ্ত, নারায়ণ দেব, বিপ্রদাস প্রমুখ। চÐীমঙ্গলের প্রধান কবি হচ্ছেন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, যিনি কবিকঙ্কন নামে সমধিক পরিচিত। অন্নদামঙ্গলের প্রধান কবির নাম ভারতচন্দ্র রায়। মঙ্গলকাব্যসমূহ ধর্মীয় প্রেরণায় রচিত হলেও এ-সব কাব্যে মধ্যযুগের বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতার নানা দিক বিধৃত হয়ে আছে। সাহিত্যগুণেও এ-কাব্য বিশিষ্টতার পরিচয়বাহী। ধর্মীয় প্রেরণায় রচিত মধ্যযুগের সাহিত্যের আর একটি উল্লেখযোগ্য শাখা হচ্ছে অনুবাদ কাব্য। সংস্কৃত রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবতের অনুবাদের মাধ্যমে এ কাব্যশাখার সৃষ্টি। পঞ্চদশ শতাব্দ থেকে সপ্তদশ শতাব্দ পর্যন্ত অনুবাদকাব্য বিশেষ বিকাশ লাভ করে। রামায়ণ-মহাভারত ভাগবতের অনুবাদের মাধ্যমে নতুন জীবনাদর্শে সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন অনুবাদকারীরা। বাল্মীকির মূল রামায়ণ প্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন কৃত্তিবাস ওঝা। পঞ্চদশ শতাব্দে তিনি রামায়ণ অনুবাদ করেন। মহাভারতের প্রথম বঙ্গানুবাদক হচ্ছেন কাশীরাম দাস। আরও অনেক কবি রামায়ণ ও মহাভারত অনুবাদ করে বাংলা অনুবাদ কাব্যের শাখাটি সমৃদ্ধ করেছেন।
মধ্যযুগে এ পর্যন্ত যে-সব সাহিত্যশাখার কথা আমরা জেনেছি, তার সবগুলোই হিন্দু ধর্মের বিষয় ও বিধানকে অবলম্বন করে রচিত। ইসলাম ধর্মের প্রসার ও প্রচারকল্পে সুফি ধর্মমতের প্রত্যক্ষ প্রেরণায় এ-সময় মুসলিম কবিদের হাতে নতুন এক কাব্যশাখার সৃষ্টি হয়। সাহিত্যের ইতিহাসে এ কাব্যশাখা রোমান্সমূলক প্রণয়-কাব্য নামে পরিচিত। এগুলো মূলত আখ্যান কাব্য। বাংলা রোমান্সমূলক প্রণয়কাব্যের ধারায় যাঁদের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়, তাঁরা হচ্ছেন সৈয়দ সুলতান, সৈয়দ আলাওল, মুহম্মদ কবীর, কাজী দৌলত, দৌলত উজির বাহরাম খান প্রমুখ। এঁদের মধ্যে সৈয়দ আলাওলের অবদান খুবই উল্লেখযোগ্য। পদ্মাবতী, হপ্তপয়কর প্রভৃতি আলাওলের উল্লেখযোগ্য কাব্য। রোমান্সমূলক প্রণয়কাব্যসমূহ ধর্মীয় প্রেরণায় সৃষ্টি হলেও এগুলোর মধ্যেও মধ্যযুগের বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সামাজিক পরিচয় পাওয়া যায়।

Tags

Newsletter Signup

Sed ut perspiciatis unde omnis iste natus error sit voluptatem accusantium doloremque.

Post a Comment