News Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

সুয়েজ খাল

সুয়েজ খাল

রোম ওয়াজ নট বিল্ড ইন এ ডে- সভ্যতার বিকাশকে তুলে ধরতে ইংরেজি এ বিখ্যাত প্রবাদের বিকল্প নেই। মানুষ কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন দ্বন্দ্ব-সংঘাত, উত্থান-পতন, উদ্ভাবন-ধ্বংসের পথ পাড়ি দিয়ে সভ্যতাকে এগিয়ে নিচ্ছে। প্রয়োজনের তাগিদে আবার অজানা কোন খেয়ালিপনায় মানুষ প্রকৃতিতে কৃত্রিমতা জোড়া দেয়। এ কৃত্রিমতা কখনও সভ্যতার বিকাশ ঘটায় আবার কখনও বয়ে নিয়ে আসে এমন সর্বনাশ যা সভ্যতার অস্তিত্বকেই চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলে। তেমনই প্রকৃতির সঙ্গে একটি কৃত্রিমতা জোড়া দিয়েছিল মিশরীয় ফারাও নেকো। আর সে কৃত্রিমতার নাম সুয়েজ খাল। এটি ভূমধ্য সাগর আর লোহিত সাগরের সংযোগ খাল। প্রথম খননের সময় এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৬৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৮ মিটার। এরপর কয়েকবার সংস্কারের পর বর্তমানে সুয়েজ খালের দৈর্ঘ্য ১৯৩.৩ কিলোমিটার ও প্রস্থ ২০৫ মিটার। খালটি মিশরের সুয়েজ ক্যানেল অথোরিটির মালিকানাধীন। বিশ্বে সুয়েজ খালের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব যে কত প্রবল তা এর উপকারিতা থেকেই বোঝা যায়। এ খালের কারণে ইউরোপ ও ভারতের মাঝে সমুদ্রপথের দূরত্ব প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার কমে গেছে। এ খাল দিয়ে না এলে কোনো জাহাজকে ইউরোপ থেকে দক্ষিণ এশিয়া আসতে হলে আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে আসতে হবে। এক হিসাব অনুযায়ী ২০১২ সালে সুয়েজ খাল দিয়ে ১৭,২২৫টি জাহাজ যাতায়াত করেছে অর্থাৎ দিনে গড়ে ৪৭টি। ভূগোল বিষয়ে কিছুটা জ্ঞান রাখে এমন ব্যক্তিমাত্রই সুয়েজ খালের কথা জানেন। তবে সুয়েজ খাল যে সেই ৪,০০০ বছর পূর্বের ইতিহাস বহন করে তা অনেকেরই অজানা। আরও অজানা বিষয় হল এ সুয়েজ খাল দিয়ে ভেসে এসেছিল মিশরের উপর অমানবিক দুর্দশা। পরাধীনতার শেকল। মিশরকে প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে এ শেকল বয়ে বেড়াতে হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মতে মিশরের কন্টকহার ছিল এ সুয়েজ খাল। এর প্রথম ইতিহাসে খালটি অসম্পূর্ণ। খ্রিষ্টপূর্ব ১৮৯৭ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৮৩৯ অব্দের মধ্যবর্তী সময়রে কথা। দার্শনিক এরিস্টিটলের লিখিত বক্তব্যে এ খাল খননের কথা উল্লেখ রয়েছে। মিশরের অধিপতি ফারাও নেকো পূর্বের ফারাওদের মতো যুদ্ধবাজ ছিলেন না। শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা নিয়ে তিনি বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাইলেন। তাছাড়া যুদ্ধ না করলে তার বিশাল নৌবহরকে কোন কাজে ব্যস্ত রাখবেন তিনি সেই দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়লেন। একদিন স্বপ্নে নীল নদ থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত দীর্ঘ্য একটি খাল খনন করার দৈববাণী পেলেন। লক্ষাধিক দাস নিয়ে শুরু হল খাল কাটা কর্মসূচি। নেকো বিশ্ববাসীকে এ বাণী পৌঁছাতে চাইলেন, মিশরীয়রা শুধু যুদ্ধবাজ হয় না। বাণিজ্য, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পথে তারা হাঁটতে জানে। কিন্তু হঠাৎ করেই খোদ নেকো খাল খনন কর্মসূচি বন্ধ করে দিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে তার কাছে আরেকটি দৈববাণী এসেছিল- এ খালই নাকি মিশরের জন্য কাল বয়ে আনবে। মিত্র নয়, শত্রুদের পথ সৃষ্টি করে দিচ্ছেন তিনি। মিশরকে রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে এ খনন বন্ধ করে দিতে হবে। এমনই করে মিশরের ফারাওদের আমলে ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগর এ দুই সাগরের মিলন আর হয়নি। সে সময়ের প্রজারাও এ কর্মসূচি বন্ধ করাকে দেবতার নিষেধ বলে বিশ্বাস করতেন। এভাবে কেটে গেল হাজার হাজার বছর। আলবেনীয় রাজা মোহম্মদ আলীর বংশধর সাঈদ পাশার যুগ এলো। সাঈদের পরমপ্রিয় বন্ধু কায়রোস্থিত ফরাসি রাষ্ট্রদূতের পুত্র ফার্ডিনান্ড দ্য লেসেপস। প্যারিস থেকে আনা বন্ধুর উপঢৌকনে পাশা মুগ্ধ হয়ে লেসেপ্সের টোপ গিললেন। টোপটা ছিল ফারাও রাজা নেকোর অসম্পূর্ণ খালকে সম্পূর্ণকরণ। ১৮৫৯ সালের ২৫ এপ্রিল শুরু হয় সাঈদ পাশা কর্তৃক ফারাও নেকোর অসম্পূর্ণ কাজের পুনরুদ্ধার। এ খাল তৈরি হতে সময় নেয় দশ বছর আর প্রাণ হারায় ১,২০,০০০ শ্রমিক। খালটির নামকরণ হয়- কা’নাত আল সুয়াইস। কিন্তু ফারাও নেকোর দৈববাণী সত্যিতে পরিণত হয়ে যায়। সুয়েজ খাল স্বপ্ন না এনে নিয়ে আসে দুঃস্বপ্ন। যুদ্ধ বিগ্রহের কারণ হয়ে দাড়ায় এটি। মিশর পরিণত হয় ভাগাড়ে। ছলচাতুরি করে ব্রিটিশরা সুয়েজ খাল দখল করে নেয়। স্বাধীন মিশর আবার পরাধীন হয়। ১৯২২ সালে ব্রিটিশদের হতে স্বাধীন হওয়ার পর কন্টকহার সুয়েজ খাল হীরক মালায় পরিণত হয়। বর্তমানে ১৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ্য সুয়েজ খালের সঙ্গে ৩৫ কিলোমিটার বাইপাস যোগ করা হয়েছে। মিশরের অর্থনীতিতে এর এতটাই প্রভাব পড়ছে, মিশরের বর্তমান সরকার
সুয়েজ খাল কে ‘আল্লাহর দান’ বলে অভিহিত করেছেন। খালের এ সম্প্রসারণে জাহাজগুলোর অপেক্ষার সময় ১৮ ঘণ্টা থেকে ১১ ঘণ্টায় নেমে এসেছে। বর্তমানে দৈনিক ৪৯টি জাহাজ পার হয়ে যাওয়া এ খাল দিয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে দৈনিক ৯৭টি জাহাজ যেতে পারবে। মিশরের অর্থনীতে যোগ হবে ১৩২০ কোটি ডলার।

Tags

Newsletter Signup

Sed ut perspiciatis unde omnis iste natus error sit voluptatem accusantium doloremque.